নার্স তোমার নগরী
সেলাইকারকের সোনামূখো সুঁইয়ের খোঁচায় প্রতিবার বিদ্ধ হয় যে বাদামী শহর-
সেখান থেকেই আয়তকার কেকখন্ডের উৎসবে মাকাল মেখে নার্সকে নিকটাত্বীয় ডাকি।
নার্স তুমি ভালো গণিতক, যন্ত্রণা দেখে বুঝে নাও ক্ষতের পরিধি
পালক গুনে বলে দাও কতটুকু অভিজ্ঞতা পাখিভাবে উড়ালের।
তোমার মোহটানা সুরতের বাঁকে বাঁকে পুঁতেছি চিতলের বড়শি আর
অক্ষরলতা জড়ায়ে হাসপাতালের চাকার পাশে আছি নদীর ভূমিকায় –
প্রতিবেশী আঙুরকন্যা দর্জিবাড়ির মশলারাণী, নার্সের সখী
তৈরী করে ফেনার জাহাজ, জানায়- সাদা এপ্রোনের মাপ এদানীং দর্জির হোমটাউন,
দর্জি সেলাই করে এপ্রোন, এপ্রোন থেকে চুরী হয়ে যায় নার্সের ঘ্রাণ-
আমার নদী সুর্যাস্তের আলকাতরায় ডোবা হয়ে ওঠে, ঢেউভ্রণের গলিত শাখায় ওড়ে দরিদ্র শকুন-
বিশস্ত আঙুল ভুলে যায় কতটা ছুঁড়লে ঢিল দুলে ওঠে জলের কোমর…
অ্যাম্বুলেন্স
আমাকে নিয়ে যাও হাসপাতালে, শহরের মাঝ দিয়ে উচ্চশিষ বাজিয়ে। মাথায় উড়িয়ে রঙিন প্রজাপতি। প্রয়োজন হলে রঙলেনে ঢুকে যাও, ট্রাফিককে ভেঙচি কেটে এবং আরো আরো চোখ আকর্ষিত করে। তোমার গতিতে ত্রস্ত হয়ে নেমে যাক রিক্সা পয়ঃনালায়। তুমি যেন পঙ্খিরাজ, ডানা মেললেই উড়তে পারো। বুকের ওড়না সরিয়ে তোমার আমি দেখি মানুষের ঘাম ভেজা মুখ, রোদে ঝিলকে ওঠা চকলেটের জ্বিলজ্বিলে খোসা।
হাসপাতালের সিড়ির কাছে রেখে এসো অন্তত। আমার প্রকৃত কেউ নেই। ডাক দিলে তুমি এসো- পৌঁছে দিও হাসপাতালে কিংবা মর্গে কিংবা কবরে। বহুবিধ অসুখ সমেত বেঁচে থেকে তোমাকে নিবিষ্ট পর্যবেক্ষণ করি তাই…
মানুষ তুমি অহেতুক
ছয় তলা দালানের মাথা থেকে লাফ দিলে মরে যাবে শরীর!
মন তার উড়ে যেতে পারবে কি তবু সন্ধ্যা পাখির মত?
জীবনের গোপন সুখের টানে আলোকবর্ষ দূরে হাওয়ার ছায়ায়
বরফ ভাঙার উষ্ণতা নিয়ে যেখানে উদগ্রীব থাকে কারও অপেক্ষা- সেখানে!
এতবার নিজেকে বিক্রি করেও মানুষ কেন পারেনা
নিজের ওজন বয়ে বেড়াতে পৃথিবীর অসমাপ্ত অধ্যায়ে!
কেন সে চায় কেউ অপেক্ষা করুক, রাতের বকুল ঝরুক
কেন সে চায় কখনো কখনো- মুখে কিংবা ঠোঁটে নয়
কপাল, চিবুক কিংবা পশমী বুক অথবা কামার্ত শিশ্নে নয়
কেউ চুমু রাখুক, রাখুক গভীর আশ্রয় বুকের ভেতর হৃদয়ে-
হৃদয়ের স্বচ্ছ জলাশয়ে করুক স্নান আর স্বপ্নের পোনারা ভাসুক।
চিকন রোদের সুতোয় ছয়তলা ছাদের মাথায় বাসি ভাতের মত
পঁচে যাচ্ছে
শরীর
মগজ
মন…
লুকবো কোথায় পৃথিবীর আবহাওয়ায় বেমানান এ জীবন?
চেক
কখনও কেবলই বাম চোখে ঝরে জল, ডান চোখে ডাকে হড়িয়াল
লাল কভারের সোফায় শুয়ে থাকে সাড়ে তিন হাত গোরস্থান,
মাথার কাছে পুড়তে থাকে দুপুর মাখা জ্বরের আগরবাতি-
দুঃখ তোমার চোখের নিচে কালি, আয়না জুড়ে প্লাস্টিকের এক দেহ
জানলা দিয়ে হেঁটে গেলো খোলা পিঠের চাঁদ, মুখের পাতায় এলকোহলের শিরা
বিষণ্ণতা, এসময়ে হাত ছেড়ে চলে যেওনা, বদলে ফেলোনা জামায় লাগানো নেমপ্লেট!
অলিন্দে নেমো পরিচিত “সাড়া”; আমিতো বিরহে রেখেছি সেজদা
আমাকেই পুড়িয়ে ফেলেছি ভাতের হাঁড়িতে, শুকিয়ে ফেলেছি বীজের ভেতর
ঘড়ির ব্রার নিচে গুম করে দিয়েছি রাতের খোলাবুক খরগোশ-
এখন আমার চৌষট্টি খোঁটে পালহীন নৌকা এমাথা ওমাথায় দৌড়ায়
চালহীন এক নৌকা বাঁচাতে…
প্রভু
কাঁচ ভাঙা গুড়ো গেঁথে যায় আঙুলের নরমে, বিন্দু বিন্দু লাল ফুটে ওঠে গোলাপের আভায়৷ এসব নিছক ভাবনার বিলাসিতা। পৃথিবীর সমস্ত ঘাস লাল হয়ে ওঠলে রক্তশূণ্য আমি উঠে যাই মর্গের পাশের ট্রেনে। বরফহীম শরীর নিয়ে আব্বা কয়েকটি কাগজ গুঁজে দেয় চোখে। কাগজে- টেন ক্লাসে তোলা সাদাকালো ছবি, টুয়েলভের রঙ্গিন আমার টুকরো৷ কয়েকটি কাক সেই কাগজের নাড়ী ভুড়ি টেনে ছিঁড়তে থাকলে মর্গ থেকে বেরিয়ে এসে বুঝি, পৃথিবীর কোথাও আমি নিরাপদ নই। ক্রমশ পৃথিবীর জন্য অনুপযুক্ত হয়ে উঠছি।
লাশের মত ফুলে উঠছে শরীর অথচ মা বলছে স্বাস্থ্যের উন্নতি। ঠিক দুটোয় প্রচন্ড ক্ষুধায় উনুনের পাশে গিয়ে দেখি রান্না ঘরে নুন নেই বলে মা দৌড়াচ্ছে সমুদ্রের দিকে- নুন আনতে। অথচ দুটো আস্ত সমুদ্র আমি লুকিয়ে রেখেছি৷ মা’কে ডাকতে ইচ্ছে করেনা। ক্ষুধা পেটে মাথার মগজ শুকিয়ে যায়৷ চারপাশ থেকে অনন্ত অন্ধকার এগিয়ে আসে। সেই অন্ধকার পেরিয়ে মা আর ফিরে আসবেনা, আব্বা জানবেনা- ফজর হবেনা কোনও দিন।
প্রভু, তুমি কি জানতেনা, আমি এতটাই হেঁয়ালি হবো? অবহেলায় হারিয়ে ফেলবো সূর্যটাও!