চৌদ্দোই চৈত্র চোদ্দোশো ছাব্বিশ
●●●
অশনি সংকেত :
উঠোনের এক কোণে ছাঁ সমেত মাটি খুঁটছে মুরগিটি—
আকাশে পাক খাচ্ছে চিল!
আচমকা কান্নার আওয়াজে—
হেঁসেল ফেলে ঘরে ছুটে আসে গৃহিণী
শিশুটি তাঁর খাট থেকে পড়ে গড়াচ্ছে মেঝেতে;
সন্তান কোলে নিয়ে সারা গায়ে চুমু খায় মা।
ভয়ার্ত বুকে জাপটে ধরে— মুখে তুলে দ্যায় স্তন।
বাইরে : উনুনে তীব্র আগুনে পুড়ে যাচ্ছে তরকারি।
উন্মাদের মতো মুরগিটি বনবন ঘুরছে!
শিকারী চিল (তীক্ষ্ণ নখে খামচে একটি ছাঁ) উড়ে যাচ্ছে দূর আকাশে…
একুশে বৈশাখ চোদ্দোশো সাতাশ
●●●
বারবার মাটির কাছে যাই—
যাই বৃক্ষের কাছেও
নিজেকেই করি রোপণ
মাটিতেই জন্ম আমার—মাটিতেই মরণ।
দশই আষাঢ় চোদ্দোশো সাতাশ
●●●
যখন চাল বাছা রেখে চুল ঝাড়ে গৃহিণী—তার শাড়ীর আলগা ভাব— ধান ক্ষেতের নিখুঁত নিড়ানি থামিয়ে দ্যায়! পৃথিবী তো কেবল ঘুরতেই থাকে! তুমুল ঘুরতে ঘুরতে সবুজ খেকো রমণী ও সুঠাম দেহী শিকারী পুরুষটি ঝাপ এঁটে নিঃশব্দে ঢুকে যায় ছনের ঘরে!
অনেক আগের মৃত বুনো নলখাগড়ারা জীবিত হয়! নাতিশীতোষ্ণ হাওয়ায় মৃদু দোলে…
মেহগনি কাঠের চৌকিটি গাছ হয়ে ওঠে! পূর্বজন্মের করুণ কান্নায় পাতা ঝরে! সঙ্গম—শীৎকার শব্দ— পাখিধ্বণি হয়ে যায়!
তারপর ডোবাগুলোয় পোনামাছ ভাসে, ব্যাঙাচি সাঁতরায়, শামুক হাঁটে, শালুক লতা ও শাপলা ফোটে। আর পুরুষের নাকে স্তনের ঘ্রাণ ও রমণীর ঠোঁটে শিশ্নের স্বাদ নিয়ে ঘুমিয়ে যায় প্রকৃতি!
অতঃপর প্রজাপতি ওড়ে— একটি ন্যাংটো শিশু দৌড়তে থাকে ফড়িংয়ের পিছে আর ঊরুর ফাঁকে তার নুনুটি কেমন ঝুলতে থাকে— দুলতে থাকে…
ছাব্বিশে আষাঢ় চোদ্দোশো সাতাশ
●●●
দুটি মর্মান্তিক দৃশ্য :
এক.
পুকুর পাড়ের কয়েকটি গাছ কেটে ফেলার পর— জলে ভাসল কিছু খড়কুটো—নষ্ট নীড়! ভাঙা ডিম আর মরা ছাঁ! অসহ্য চিৎকারে উড়ে গ্যালো কয়েকটি পাখি!
দুই.
একটি মেহগনি গাছ তরতর করে বেড়ে ওঠে! সেখানে জন্মে দুটি পরজীবি উদ্ভিদ— ক্রমেই তারা তরতাজা, হৃষ্টপুষ্ট হলে ধীরে ধীরে নুয়ে আসে মেহগনি! শুকনো ডালে বসবাস করে কয়েকটি চড়ুই, শালিক, কাক ও সাতভাই চম্পা…
বৃক্ষের মোটা গুড়ি দেখে বেরিয়ে আসে মালিকের ভীষণ লাল জিভ! শুধু একটি শব্দ ‘ফার্নিচার’ শুনে মারা যায় গাছটি!
পাঁচই শ্রাবণ চোদ্দোশো সাতাশ
●●●
মা আমাকে বলে— ‘কবিতা লেখা ছেড়ে দে বাবা! তোর নিজেরও তো পেট আছে— কবিতার চেয়ে ভাতের দাম বেশি।’
বাইশে আশ্বিন চোদ্দোশো সাতাশ
●●●
পরের গোপন সঙ্গম দৃশ্য অথবা মৎস্য শিকার :
উথাল-পাথাল সমস্ত পুকুর! গাঢ় নীল রঙের মোলায়েম বিছানায় দুটো বিপরীত লিঙ্গিয় শোলমাছ— খেলা করে জলের আয়নায়!
আহা! কীভাবে রমণীর বুক মর্দন করে পুরুষ— কীভাবে চুমু খায় ওরা! কেমন সবুজ শাপলা, কলমি পাতার মতো ভাসে— ছুঁড়ে ফেলা সমস্ত অন্তর্বাস!
আর মরা ডালে বসে একটি মাছরাঙা— তীব্র ক্ষুধায়— জিহ্বার প্রবল বাসনায়— ভয়ানক তীক্ষ্ণ চোখে— টাটকা মাছেদের দিকে তাকিয়ে থাকে…
পঁচিশে কার্তিক চোদ্দোশো সাতাশ
●●●
কত যুবক-যুবতী হেঁটে যায় এই রাস্তায়
নরম শারীরিক বিন্যাস তাঁদের মগজ থেকে—
চুল বেয়ে নেমে আসে পাশের পুকুরে
আর আমি নারী হীন দাবার যুদ্ধ বোর্ডে
পরুষ ঠোঁটি সিগ্রেটের ছাই ফেলি!
দেখি একটি সাপ জলের ভেতর
মাথা বের করে সাঁতরে বেড়াচ্ছে
আর গাছের শেকড় বয়সী মানুষের
রগের মতো ফুলে আছে মাটির ওপর।