১
এই জল যেন ছুটে যাওয়া তৃষ্ণার ভান
নদীর উপর ভাসে নাও জলের উজান—
স্রোতের উজানে, মাঝি জীবনের দাঁড় টানে
দাঁড়ের কী বেদন—কেবল জলই তা জানে!
তবুও পরান মাঝি গাঙে গাঙে তোলে ঢেউ
দূরে মনে হয়, ওপারে তাকায়া থাকে কেউ।
এই সময় আসমান থেইকা পড়ে জল—
নদীর ঢেউয়ে-স্রোতে সুর করে টলমল।
জলের উজানে তরি, কী টলমলায়মান!
নাও থেকে জলে—ডুবে যায় শরীরসাম্পান।
এই দেহ, দেহ নয়—কেবল দেহ-সাম্পান;
পাপী-তাপীসহ দিই পাড়ি, নূহের উজান!
২
এ রাত যেন-বা বসে থাকে নদীর কিনার
কালো করে ধেয়ে আসা মেঘের মিনার।
ছলাৎ ছলাৎ বয়ে যাওয়া স্রোতের মায়া
জলের সুরে ধরেছে গান রসিক নাইয়া।
মেঘের ভেতর সুরে উঠেছে বজ্র নিনাদ—
নদী জানে কতটুকু জলে ঘটে বজ্রাঘাত।
নদীর নামতাপাঠ শেষে উঠে এলে মাঝি—
নদীর সাথে না’য়ের ঘটে একি কারসাজি!
কালোরঙে তবু ধেয়ে আসে মেঘের মৈনাক
আজীবন যেন-বা সমুদ্রে—ছোটে চলা বাঁক।
ফিরে ফিরে আসে যেন করুণ এক নাইয়া
এই জীবন যাবে—কূলে কূলে নাও বাইয়া।
৩
আমি যদি হইতাম বন্ধু বাঁকখালি নদী
তোমার গাঁয়ের পাশে, বইতাম নিরবধি।
সকাল হইলেই বন্ধু তুমি, আসিতে নাইতে—
কোমরে কলসি লয়ে আসিতে রাত-বিরাতে
আমি যদি হইতাম বন্ধু, নদীরূপী ছল—
তুমি বইয়া যাইতে—হইয়া গাঙের জল
নদীর বুকে ভাসিয়া করি শরীর-কোরবান;
জলের ভেতর গায়—দাঁড়ের করুণ গান
নদীতে গড়ায়া পড়ে টুকরো টুকরো জল
জলের ভেতর জল এসে বাড়ায় অতল
আমি যদি হইতাম বন্ধু, নদী বাঁকখালি—
চাঁদ হইতা গাঙের—জল হইতো রুপালি
জল হইয়া বইসা থাকি ঘাটে—আইসো রাধা;
জল নিতে আইসা আমারেও ভরিয়ো আধা।
৪
আমারেও নিয়া যাইও বাঁকখালির বাঁকে
যেখানে নদীর জল ছলাৎ ছলাৎ ডাকে
যে মতে নদীতে নাও বেয়েছিল মাঝি—
জলের সাথে যেন-বা ধরেছিল বাজি!
এই ডুবে নাও—এই ভাসে, নদীর চালাকি
জলের লগে নায়ের এ-জীবন মাখামাখি!
সারাদিন বাইছি নাও কানাকড়ি পাইছি কই?
গাঙ পার হয়া আমারে ভুইলা গেছে সই—!
তবু তোমায় পার করি রোজ এই বাসনা—
যদি একবার দাও তোমার হৃদয় খানা!
৫
ও নদী আমিও তোর বুকে ভিড়াব সাম্পান—
যেমতে নদীতে মাঝি গায়—বাওয়ালি গান!
বালিহাঁস স্নানসেরে যেভাবে পাখনা ঝাপটায়;
তেমন ডুবসাঁতার শিখে নেব নোনা দরিয়ায়।
ও নদী আমিও তোর বুকে ডুবে যাবো একদিন—
যেমতে পাখিরা উড়ে যায়—অজানা সাকিন।
আমার তো নেই ঘর, নেই সাং—নেই কোনো তীর;
জলে ভাসালাম দেহ—যে দেহের জলই শরীর!
এদেহ ভুলে গিয়ে সাঁতার; ডুবে গেছে জলে—
অর্ধেক গেছে জ্বলে তার—অর্ধেক অন্তস্তলে।