এক
জলের উপর স্থির হয়ে ছিলো সে।
ঢেউ এসে তাকে শিখিয়েছিলো মানুষে-মানুষে কীভাবে সম্পর্ক করতে হয়। অতি বিশ্বাসে রেখেছিলো কারো হাতের উপর হাত। সে জানতো না ঘুম ভেঙেই কখনো আয়নায় মুখ দেখতে নেই, তাতে জীবনের পথে দূঃখের দেখাই বেশী মেলে।
খুব সাধারণ অথচ বুকের ভেতর যার পার্থিব ভালোবাসায় ভরপুর। লোক দেখানোর চেষ্টায় যে কখনো নিজেকে প্রদর্শন করে না, নিরর্থক অর্থের প্রয়োজনে যে কখনো অহঙ্কারের হুঙ্কার উড়ায় না, তার ভালোবাসার অধিকার থাকলেও, ঠিক সত্যিকারের ভালোবাসা পাবে না, এটাই যেন নিয়ম।
তবুও সে হাসে, আর তার হাসিতে জন্ম নেয় নতুন একটা সকালের। যেখানে বৃষ্টিতে জমে যায় জল। জলের উপর স্থির হয়ে থাকে সে।
দুই
ভোর রাত থেকে বৃষ্টি। তুমি জুড়ে আছো, রাতের মায়ায়। কতোদূর দুজনায় অথচ চোখ মেললেই দেখতে পাই, কঙ্কাবতী’র রুপে। আমি রাত্রির গায়ে হেলান দিয়ে একটা সকাল লিখে যাই, কই তুমি তো কখনো চোখ মেলে সকালকে দেখো না!
তোমার কাজের ভীড়ে যেন এক দীর্ঘতম বিশ্বাস আমি। আমার বিশেষ কোন ক্ষমতা নেই, নিরুপম ভালোবাসা ছাড়া। ওই বেদনা মুখর চুলের সমুদ্র ঢেউ—এ একটা জীবন রেখে যাবো। তুমি হয়তো ভেবেই বসে আছো, আমাকে জয় করতে পারোনি…
কিন্তু—
কবির মতো আমাকেও বলতে হয় যতোবার তুমি দূঃখ পেয়েছো, আমায় পেয়েছো জেনো।
তিন
রুপু বললো— আপনি এই সম্পর্ক ধরে রাখতে পারবেন তো?
বাইরের কোলাহল থামেনি তখনও। মেঘের ডাকে সজাগ আষাঢ়ম্য বাড়ন্ত বর্ষা। বৈদুত্যিন বাতির স্বল্প আলোতেই আমাদের গৃহ প্রবেশ হয়েছে কিছু আগে। দেয়ালের ঘড়িটা বন্ধ হয়ে আছে অনেকদিনাব্দি! যে কারণে সঠিক সময়টা আঁচ করতে পারছি না। তবে রাত তখন মধ্যরাতে যাবার পথে যে চলে যাচ্ছে তা আন্দাজ করতে পারছি।
বিয়ে নাকি নতুন জীবন। আমি তো জানতাম দিন যায় জীবন পুরোনো হয় বিয়ে সেখানে সমাজ বিবর্তনের একটা অধ্যায় মাত্র। আমার ভাবনার গায়ে জলস্রোতে দিয়ে যে নদীপথ তৈরি করে দিলো পরিবার তাদের শাপ-শাপান্ত থেকে নিজেকে ভুলে রাখতে নতুন জীবনের সুরে ভেসে উঠলাম।
যে মানুষটি আমাকে চেনে না, জানে না। আমি পুরুষ, না পশু, নাকি সাইকো তা’র বিচার না করেই শুধু পরিবারিক কথ্যরীতির জোরে অচিন্তনীয় নির্ভরতায় আমার হাতে-হাত রেখে দিলো। এমনকি সম্পূর্ণ অপরিচিত একটা নতুন শহরে এসে এখন আমার সাথেই একই ঘরে— একই বিছানায় শুরু করতে যাচ্ছে পরিচিত আকাশ বিচরণ।
জানালাগুলো বন্ধ করতে করতে ভাবলাম এবারের উত্তরটা একটু দীর্ঘ করেই দেবো কিন্তু ভেতর থেকে কথা আসছে না অগ্যতা ঘর দরজার পর্দা টেনে দিয়ে বললাম—সম্পর্ক কি কখনো ধরে রাখা যায়? সম্পর্ক তো টেনে নিয়ে যেতে হয় আমৃত্যু পর্যন্ত।