যে আছো প্রিয়তম গান, আসো পতঙ্গের নামে। পতঙ্গ অমৃতের ছুরি মেলে শুয়েছিলো আমৃত্যু তৃষ্ণায়। পতঙ্গ বুকের ভিতর থই থই আগুন নিয়ে উড়ছে তোমার পদতল ঘিরে। ডুবে যাচ্ছে চন্দ্রপৃষ্ঠ থেকে পৃথিবীর আলো। চাঁদের শরীরে এখনো জেগে আছে কতিপয় গভীর ক্ষত অন্ধকারের নিঝুম গন্ধ বুকে ধরে। আর প্রতিরাতে আকাশের গাছ থেকে তোমার একফালি বারান্দায় ঝরে পড়ে দুইহাজার তারা, তুমি ঝাঁট দিয়ে ফেলে দাও তারাদের। তোমার ঘরের দেয়ালে কাঁপে বিপরীত দেয়ালের ছায়া। পিঁপড়ার সারি মেঝে থেকে সিলিং-এর দিকে আঁকে জ্যামিতি বইয়ের নয় নম্বর উপপাদ্য। আমাদের মুখোমুখি যাপন, আর গোলটেবিল বৈঠক শেষ হওয়ার আগেই তোমার খাটের তলায় সারি সারি বোতলে বন্দী সমদ্রবৃন্দ কেঁপে ওঠে স্বরচিত শৃঙ্গার ও উৎসের বেদনায়। তুমি সমদ্রকেও বন্দী করে রাখতে পারো এক লহমায়। তোমার ঘর ভেঙে সকল আয়না গড়িয়ে চলে যায় বনের ধারে, নদী হয়ে যায়। তুমি নদী তীরে বসে থাকো, নিজের মুখ খোঁজো জলের পরতে। আর স্রোতের টানে জল ভেঙে ভেঙে যায় দিগন্তের দিকে। তোমার দুহাতের ভাঁজে উদ্ধত হয় দোলনচাঁপার তেরোশো একর পাহাড়ি বাগান। হাওয়া দুলে ওঠে। দূরে পাহাড়ের ওপার থেকে উড়ে আসে বাণী ও বীণার মিছিল সকল। উদ্ভিদ সব ফিরে যায় বিলম্বিত লয়ে বৃন্দাবনীর দিকে। আমার আঙুলেরা উদ্ভিদ হয়ে যায়। নিমের ছায়ার তলে গেঁথে রাখি আমার ক্লান্তি শেষের যতো আছে কবিতা ও গান। হাওয়া দুলে, ঘরখানি দুলে হাওয়ায়, তুমি দুলে ওঠো আমার চোখের ভিতর, আমার শিরার ভিতর দুরারোগ্য জ্বর সোনালি অসুখের দেশ হয়ে যায়। সিঁথির ভাঁজে চকচক করে তোমার মাথার তালু। ওখানে লেগে যায় আমার গাঢ়তর নিশ্বাসের দাগ। নিশ্বাসের ভিতর আমার লক্ষ লক্ষ চুম্বন মাতৃহীন হয়ে উড়ে বেড়ায়। তুমি বুঝতে পারো। সবকিছু স্মৃতি হয়ে যায়। আর আমার আঙুলের অরণ্য কাঁপে তীব্র লাল যাতনায়। ওগো গান, অন্ধকারের চিরামরাময় স্মৃতি তোমার নখের ভাঁজে এখনো ধান ও যবের নির্যাস হয়ে বেঁচে আছে আমার চোখের ঘ্রাণ নিয়ে। আর সব হুহুপাখি হয়ে গেছে। হাহাকারের কেনো ডানা থাকে না, বলো। আমি ফুলের পাশ দিয়ে হেঁটে গিয়ে দাঁড়াচ্ছি চোখের বাজারে। মানুষ, পশু আর পাখির চোখ বিক্রি হচ্ছে রোদচশমার বিনিময়ে। আমার শার্ট আর প্যান্টের সাতটা পকেট, পকেটভর্তি করে নিয়ে এসেছি রোদচশমা। সিনেমা হলের গেট থেকে কিনেছিলাম পনেরো বছর আগে। এখন কাজে লেগে গেলো। মানুষের চোখে এখন সেই দিঘিটলটলে ছায়াছবি নেই আর। তাই কিনে নিলাম একজোড়া হরিণের চোখ, কিনে নিলাম একজোড়া কাকের চোখ। আমার চোখের কোঠরে জ্বলছে হাজার বছরের রাত্রি। তোমাকে খুঁজে পাচ্ছি না, গান। আমি কাকের চোখ দুচোখের কোঠরে বসিয়ে তোমাকে খুঁজতে বের হচ্ছি প্রতিদিন পৃথিবীর সকল ব্রিজের নিচে, ক্যাকটাসের জঙ্গলে, মানুষের ক্লান্তির ভিতর। আর অজানিত কোনো হরবোলার কণ্ঠের ভিতর।
Subscribe to Updates
Get the latest creative news from FooBar about art, design and business.
What's Hot
প্রিয়তম গান ও অমৃতের ছুরি
নির্ঝর নৈঃশব্দ্য এর জন্ম ২৪ আগস্ট ১৯৮১, চকরিয়া, কক্সবাজার, বাঙলাদেশ। লেখালেখি আর ছবি আঁকাই মূল কাজ। পড়াশোনা করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চিত্রকলা বিষয়ে। এখন পর্যন্ত বই লিখেছেন ১৬ টি। প্রকাশিত বই (কবিতা): পাখি ও পাপ (২০১১), কাপালিকের চোখের রং (২০১৩), মহিষের হাসি (২০১৫), হুহুপাখি আমার প্রাণরাক্ষস (২০১৭), উদ্ভিদ ও বৃন্দাবনী (২০১৯)। প্রকাশিত বই (মুক্তগদ্য): শোনো, এইখানে বর্ষাকালে বৃষ্টি হয় (২০১১), পুরুষপাখি (২০১৪), আকাশ ফুরিয়ে যায় (২০১৭), কুসুমকুমার (২০১৯), কবিতালেখকের জার্নাল (২০২০), আমি ও গেওর্গে আব্বাস (২০২০)। প্রকাশিত বই (গল্প ও প্রবন্ধ): ডুবোজ্বর (২০১২, ), আরজ আলী : আলো-আঁধারির পরিব্রাজক (২০১৫), রাজহাঁস যেভাবে মাছ হয় (২০১৬), ফুলের অসুখ (২০২০)। সম্পাদিত বই : ওঙ্কারসমগ্র : বঙ্গবন্ধুর নির্বাচিত ভাষণের শ্রুতিলিপি (২০১৭)। সম্পাদিত ছোটোকাগজ : মুক্তগদ্য (২০১১ থেকে) । সম্পাদিত অনলাইন : kothaboli.com